মতিন মিয়ার এক দশকের স্বপ্ন একদিনেই পুড়ে হলো ছাই

0
2

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের চালানো তান্ডবে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী আবদুল মতিন।

নিঃস্ব মতিনের কান্না থামছেই না। কদিন আগেও যিনি ছিলেন সচ্ছল ব্যবসায়ী, সেই মতিনেরই এখন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।

‘মতিন সাউন্ড’ নামে শহরের কাউতলী এলাকায় তার দোকান। গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতাল চলাকালে সংগঠনটির সমর্থকরা মতিনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সব যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ২৭ ও ২৮ মার্চ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে উন্নয়ন মেলা চলছিল।

সেখানে মতিন সাউন্ডের ৩ জোড়া সাউন্ড সিস্টেম, জেনারেটর, মিকচার মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল ছিল।

আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভার জন্য ২৭ মার্চ বিকেলে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে নেওয়া হয় ৩ জোড়া সাউন্ড সিস্টেম, জেনারেটর, মিকচার মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল। অনুষ্ঠান শেষ হলেও ব্যস্ততার কারণে দোকানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি মালামালগুলো। ২৮ মার্চ হরতালের সময় হেফাজত সমর্থকরা সকালের পর থেকেই শহরজুড়ে তান্ডব চালায়। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর পুড়িয়ে দেওয়ার সময় পুড়ে ছারখার হয়ে যায় মতিন সাউন্ডের সব মালামাল।

একই সঙ্গে পুড়ে যায় আবদুল মতিনের স্বপ্ন, সামর্থ্য আর বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রম আর ধার-দেনা করে গড়ে তোলা মতিন সাউন্ড পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আমরা কয়েকটি পরিবারের একমাত্র আয়ে বেঁচে থাকার প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।

কীভাবে আমাদের পরিবার চলবে? এক বন্ধুর ৮ লাখ টাকা দেনা কীভাবে পরিশোধ করব, এ চিন্তায় আমি অস্থির আছি।

চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। আপনাদের মাধ্যমে আমি সরকারের কাছে সহায়তা চাই, আপনারা আমাকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিন। নইলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কিছু উপায় থাকবে না।’ সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী আবদুল মতিনের সব সখ্য সংস্কৃতি সংগঠক আর শিল্পীদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে যেন ছিল ঘর-সংসার। হেফাজতের তান্ডবে সর্বস্বান্ত হওয়া মতিনের জন্য ব্যথিত তারা। মতিনের জন্য আফসোসের অন্ত নেই শিল্পী-সংগঠকদের। কণ্ঠশিল্পী হৃদয় কামাল বলেন, মতিনের জন্য আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা যখনই ডাক দিয়েছি সে ব্যবসার কথা না ভেবে চলে এসেছে।

সে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির সহায়ক মানুষ। তাকে সরকারিভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হোক। তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের সহকারী পরিচালক বাছির দুলাল বলেন, ‘এমন তান্ডব যেন এই শহরে আর না ঘটে। এই তান্ডব আমাদের প্রিয় মতিনকে পথে নামিয়েছে। সে শিল্প-সংস্কৃতির অনেক উপকারী বান্ধব। তার ক্ষতি মানে আমাদেরও ক্ষতি।

শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এসআরএম ওসমান গণি সজীব জানান, মতিন খুব ভালো ছেলে। ঘটনার দিন সে আমাকে ফোন দিয়ে কান্না করেছে। তাঁর রুটিরুজির উপর এই বর্বরোচিত আঘাত কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলেও জানান তিনি।