স্টাফ রিপোর্টার: নওগাঁর রাণীনগরের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রদানের হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিনই কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অভিযোগ পড়ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার আবাদপুকুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক, গভনিং বডির সভাপতি ও সদস্য এবং অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রায় আট লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রদান করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গ্রন্থগারিক এনামুল হকের করা লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেরিয়ে আসছে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে অর্থ লুটপাটের কাহিনী। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে যে, ২০০৫ থেকে ২০২৪সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিম্ন মাধ্যমিক, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি খোলার নিমিত্তে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য এবং প্রধান শিক্ষক মোসা: আসমাউল হুসনা ও অফিস সহকারি জাহিদুল ইসলামের যোগসাজসে বিভিন্ন সময়ে চাকরী প্রার্থীকে অবৈধ নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আবার কোন কোন পদে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে আগের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নতুন করে বেশি অর্থের বিনিময়ে চাকরী প্রদান করেছেন। এতে করে আজ অনেকেই চাকরীর আশায় মোটা অংকের অর্থ প্রদান করে চাকরী না পেয়ে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায় যে, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে তিন লাখ ষাট হাজার টাকা, রুহুল আমীনের কাছ থেকে দুই লাখ বিশ হাজার টাকা, এনামুল হকের কাছ থেকে এক লাখ বিশ হাজার ও মোছা: শাহিদা আক্তারের কাছ থেকে নব্বই হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। তৎকালীন সময়ে এই প্রার্থীদের নিয়োগপত্রও প্রদান করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিন্তু পরবর্তিতে অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর সেই নিয়োগপত্র সঙ্গে নিয়ে পথের ফকির হয়ে সুষ্ঠ বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অভিযোগকারী বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গ্রন্থগারিক এনামুল হক বলেন অর্থের বিনিময়ে ২০১৩সালে তাকে নিয়োগপত্র প্রদান করা হলেও পরবর্তিতে বেশি অর্থের বিনিময়ে অন্যজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তিনি তার প্রদান করা অর্থও ফেরত পাননি। পূর্বে আ’লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দাপটের কারণে তারা কোন প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ করতে পারেননি। তাই এখন সঠিক বিচারের আশায় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। তারা টাকাসহ চাকরী ফেরত চান। যদি প্রশাসন সঠিক বিচার না করেন তাহলে ভুক্তভোগীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। তারা আশাবাদি যে প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি জাহিদুল ইসলাম জানান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট। তিনি কখনোই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোসা: আসমাউল হুসনার বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সদ্য বিদায়ী বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো: মুক্তাদির খন্দকার বলেন তার সময়কালীন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন লেনদেন হয়নি। ভুক্তভোগীদের করা অভিযোগের বিষয়টি অনেক আগের। তাই তিনি এই বিষয়ে কোন কিছু জানেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাইমেনা শারমীন বলেন এই বিষয়ে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। দ্রুতই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।