শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
সড়ক ও জনপথ বিভাগ শরীয়তপুরের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার ঠিকাদারদের মোবাইলে কল দিয়ে ঘুষ নিয়ে অফিসে আসতে বললেও তিনি ঘুষের অঙ্ক মোবাইলে বলেন না। অফিসে গিয়ে তাকে প্রত্যেক কাজে শতকরা ১০ টাকা কমিশন দিলেই মিলে কাজ। অন্যথায় কাজ মিলে না কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের।
রোববার (৭ জুলাই) সড়ক ও জনপথ বিভাগ শরীয়তপুরের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের সঙ্গে এক ঠিকাদারের ঘুষ সংক্রান্ত বিষয়ে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে।
এক মিনিট ৬ সেকেন্ডের ওই অডিও কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করেছেন ঠিকাদার আজাদ রহমান। রেকর্ডে শোনা যায়, সালমা আক্তার ঠিকাদার আজাদ রহমানকে একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নিয়ে অফিসে যেতে বলেছেন। আজাদ রহমান ঘুষের অঙ্ক জানতে চাইলে সালমা আক্তারের সামনে অন্য লোকজন রয়েছে, হিসেব করে অঙ্ক বলতে হবে, এছাড়াও ঘুষের অঙ্ক তিনি মোবাইলে বলতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, ঠিকাদার আজাদ রহমানের সঙ্গে সালমা আক্তারের ওই কথোপকথন হয়েছে গত জুন মাসে। কথা হওয়ার পরদিন ঠিকাদার আজাদ রহমান সড়ক ও জনপথ বিভাগে গিয়ে ওই কাজটির শতকরা ১০ ভাগ কমিশন হিসেব করে সালমা আক্তারকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়ে এসেছেন। বাকি ৫ লাখ টাকা কাজটির ওয়ার্ক ওর্ডার হওয়ার পরে দিতে হবে বলে ঠিকাদারকে জানান সালমা আক্তার। কিন্তু আরো বেশি কমিশনে ওই কাজটি অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়ার পরে সালমা আক্তার ও ঠিকাদার আজাদ রহমানের কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও সম্প্রতি ১২ জন ঠিকাদার কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম নিয়ে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সালমা আক্তার তার দুই ভাইয়ের নামে রয়েল এন্টারপ্রাইজ, সোহেল এন্টারপ্রাইজ, তার ভগ্নিপতির নামে আবুল এন্টারপ্রাইজ ও ভাতিজার নামে রাব্বি এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেই ঠিকাদারী কাজ করেন।
কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করে আবির এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আজাদ রহমান বলেন, আমি আমার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানের হয়েও কাজ করি। সড়ক সংস্কারের একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার আমাকে একদিন কল দিয়ে বলে শতকরা ১০ ভাগ ঘুষ দিলে তিনি আমাকে কাজটি পাইয়ে দিবেন। সড়ক বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তাসহ সকলেই সালমার কাছে জিম্মি। শরীয়তপুরের সব ঠিকাদারগণই জানেন সালমাকে ঘুষ না দিলে কাজ মিলে না। তাই আমি রাজি হলে তিনি গত জুন মাসের একদিন আমাকে কল দিয়ে বলেন, ঘুষের টাকা নিয়ে অফিসে যেতে। কিন্তু আমি কত টাকা নিয়ে অফিসে আসব, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে লোক আছে, এসব বিষয়ে কথা মোবাইলে বলবেন না তিনি। পরদিন আমি অফিসে গেলে তিনি আমাকে জানান এক কোটি টাকা মূল্যের সড়ক সংস্কারের কাজ তিনি আমাকে দিবেন। এক কোটি টাকার শতকরা ১০ টাকা হিসেব করে তাকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়ে আসি। কথা ছিল তিনি কার্জের অর্ডার করিয়ে দিলে বাকি ৫ লাখ টাকা দিবো। কিন্তু তিনি অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের থেকে বেশি ঘুষ নিয়ে আমাকে আর কাজ দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, এমন কোনো রেকর্ডের বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছে এমন রেকর্ড থাকলে আপনি লিখতে পারেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি ঠিকাদারগণ দিয়েছেন, সেই অভিযোগের তদন্ত মাদারীপুরের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী করছেন। তদন্ত চলমান রয়েছে।