রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি :
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের কুনৌজ গ্রামের ভ্যান চালক জামাল হোসেন (৪০) কে কোরবানীর গোস্ত দেয়নি সমাজপতিরা। মসজিদের জায়গার মালিকানা দ্বন্দ্বের জের ধরে ঈদগাহ ময়দানের চাঁদা-ভাঙ্গন পর্যন্ত নেয়নি কমিটির লোকজন। ফলে মূরগী কিনে সেই গোস্ত পরিবারের সদস্যদের মূখে তুলে দেন অসহায় এই ভ্যান চালক জামাল হোসেন। জামাল ওই গ্রামের মৃত আবদুস ছামাদের ছেলে।
জামাল হোসেন জানান,বাবা বেঁচে থাকতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট জায়গা বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকে আমরা প্রায় ৩০ শতক জায়গা ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত এক বছর আগে মসজিদ কমিটির লোকজন মসজিদের নামে ওই জায়গার দলিল আছে জানিয়ে মালিকানা দাবি করে। এরপর থেকে কয়েক বার বৈঠক হলেও মসজিদ কমিটির লোকজন জায়গার দলিল দেখায়নি। তিনি বলেন,ওই জায়গায় আম,কাঠাল,স্বজনে গাছ রোপন করে ভোগ দখল করে আসছি। এরপর আবারো মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হলে দ্বন্দ্ব মেটাতে গত শুক্রবার বিকেলে বৈঠক ডাকেন জামাল হোসেন। কিন্তু সেই বৈঠকে মসজিদ কমিটির লোকজন উপস্থিত না হয়ে শনিবার সকালে হঠাৎ করেই আমিন নিয়ে এসে জায়গা মাপযোগ করে পুরো জায়গা বেড়া দিয়ে দখলে নেয় কমিটির লোকজন। জামাল হোসেন এবিষয়টি মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালে ঈদের পরে বসে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন। এরইমধ্যে পরের দিন রোববার ঈদগাহ ময়দানে চাঁদা দিতে গেলে চাঁদার টাকাও নেয়নি এবং কোরবানি শেষে সমাজের লোকজনকে গোস্ত বিলি করে দিলেও জামাল হোসেনকে গোস্ত দেয়নি সমাজপতিরা। ফলে বাজার থেকে মূরগী কিনে সেই মূরগীর গোস্ত দুই সন্তান,মা ও স্ত্রীর মূখে তুলে দেন তিনি।
জামাল হোসেনকে কোরবানীর গোস্ত দেয়া হয়নি স্বীকার করে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি ও গ্রামের মাতাব্বর আফজাল হোসেন বলেন, এটি আমাদের সমাজের ব্যাপার। এ বিষয়ে সমাজের লোকজন ছাড়া আমি এককভাবে কিছু বলতে পারবোনা। জামাল হোসেন ঘটনাটি চেয়ারম্যানকে বলেছে,যে দিন মিটিং হবে প্রয়োজনে আপনি মিটিংয়ে এস বিস্তারতি জানবেন।
গ্রামের মাতাব্বর ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সাহেব আলী বলেন,জামাল হোসেন মসজিদের জায়গা জোর করে দখল করে নিয়েছিল। আমরা বার বার বলেও ছেরে দেয়নি। জায়গা মাপযোগের দিনে তাকে বললেও আসেনি এবং আমাদের সমাজের বাহিরের লোকজনের সাথে উঠ-বস করে। এ ছাড়া অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার কারণে সমাজের লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে তার নিকট থেকে ঈদগাহ ময়দানের চাঁদা ভাঙ্গন নেয়া হয়নি এবং কোরবানীর গোস্তও দেয়া হয়নি।
মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা জিয়াউর রহমান বলেন,ঈদের আগে ঘটনাটি জানার পর উভয় পক্ষকে ফোন করে বলেছিলাম যে আপনারা যে,যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় থাকবেন।ঈদের পর বসে সমাধান করা হবে,কিন্তু বসার আগেই সমাজের লোকজন জামালকে গোস্ত থেকে বঞ্চিত করেছে যা চরম অমানবিক কাজ করেছে। তবে যাই হউক দ্রুত উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, সমাজের লোকজন সমষ্টিগতভাবে এটা করতে পারেনা। আমি মানবিকভাবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করবো।