এরশাদ আবির, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হল- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (ছাত্র) ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল (ছাত্রী) চালু করার আশ্বাসে ৪ বছর কেটে যাওয়ার পর গত ২০শে জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর উদ্ভোধন করেন নবনির্মিত দুটি হল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হল দুটি চালু করার আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সময় অতিক্রান্ত হলেও বাস্তবে দেখা যায়নি কোনো অগ্রগতি। কিন্তু এসব পুরোনো ভাবনাকে পেছনে রেখে হল চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে উদ্দীপনা এবং আনন্দের জোয়ার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ধারণ ক্ষমতা যথাক্রমে ১২৮৪ ও ১১৭৫ জন করে শিক্ষার্থী। নবনির্মিত হল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাহবিবুরের সাথে কথা বলতে গেলে সে বলে “প্রথমেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর সৌমিত্র শেখর স্যারকে প্রতিশ্রতি যথাযথ রক্ষা করার জন্য। নতুন হলে থাকার সুযোগ পেয়ে আমরা উৎফুল্ল ও আপনার নিকট কৃতজ্ঞ”। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠিত অগ্নিবীনা(ছাত্র) এবং দোলনচাঁপা (ছাত্রী) হলের শিক্ষার্থীদের খাবারের মান এবং দাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ অসন্তুষ দেখা যায়। এসব বিষয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে নতুন হল নিয়ে তাদের বেশকিছু দাবীদাওয়ার কথা জানায়। তারা জানায় “মাননীয় ভিসি স্যারের নিকট বিনীত নিবেদন এই যে নতুন হলের খাবারের দায়িত্ব চুক্তিতে হস্তান্তর করার পূর্বে হলের খাবারের মান স্বাস্থ্যসম্মত ও ভালো রাখা সহ ভাত, ডাল ও আলু ভর্তা ফ্রি রাখা। পাশাপাশি গরুর মাংস বাদে যেকোনো তরকারির মূল্য যাতে একদম সল্পমূল্যের মধ্যে রাখা এবং হলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও খাবারের পরিবেশনের সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা”। এবিষয়ে কথা বলতে গেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার জানান “যারা ডাইনিংটা ইজারা নিতে চায় তাদেরকে আমরা দুই থেকে তিনমাসের পর্যবেক্ষণে রাখবো। হাউজ টিউটরদের নিয়ে হলের একটা ডাইনিং কমিটিও করেছি। যারা ইজারা নিবে তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে যুক্তিযুক্ত টাকায় যেন তারা যেন সবচেয়ে ভালো খাবারটা পরিবেশন করে পাশাপাশি হলের ডাইনিংয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমি সদা বদ্ধপরিকর।”
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সংস্থাপন ফি নিয়ে করা এক নোটিশে জানানো হয়, হলে উঠতে সংস্থাপন ফি বাবদ ১০০০, জামানত ৫০০ (ফেরতযোগ্য), আসন ভাড়া ২০০ টাকা (একমাস) দিতে হবে এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের উঠতে সংস্থাপন ফি বাবদ ১০০০, জামানত ৫০০ (ফেরতযোগ্য), আসন ভাড়া ৪০০ টাকা (দুইমাস) দিতে হবে; নোটিশ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে অতিরিক্ত ফি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তুষ দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিজস্ব গ্রুপ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা জানায় “যেখানে ভর্তির সময় আবাসিক হল চার্জ বাবদ ১০০০ টাকা দিতে হয়েছে, এখন আবার নতুন করে সংস্থাপন ফি নেওয়া হচ্ছে। আসলে সংস্থাপন ফি কী, জানতে চাই আমরা আর মাসিক ফি বাবদ ২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে, যা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ থেকে ৬০ টাকা”।
অতিরিক্ত সংস্থাপন ফি’র ব্যাপারে প্রশ্ন করলে মাসুম হাওলাদার জানান “এটাতো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, হলের জায়গা থেকে এখানে কিছুই বলার নেই”।বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির জানান “এই দুটি ফি’র বিষয়ে আমার যথেষ্ট স্টাডি নেই”। অন্যদিকে এ ব্যাপারে কথা বলতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট নুসরাত শারমিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা নবনির্মিত হলের যে সংকট রয়েছে- শৃঙ্খলার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সেসব নিরসন করে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া।