
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের দিক থেকে কতটা সফল সে বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও, স্বাধীনতা পরবর্তী সোনার বাংলা গঠনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান যে অনস্বীকার্য সেই বিষয়ে আশা করি দ্বিমত থাকার কোন কারণ নেই। কারণ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা কিন্তু লুন্ঠিত হয়েছে! কেননা স্বাধীনতার মূল ভিত্তি ছিল গণতন্ত্র। গণতন্ত্র না বলে একে জনতন্ত্র বলা যায়। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি। কিন্তু সেই জনতন্ত্র বা গণতন্ত্র পরবর্তীতে একনায়ক তন্ত্রে রূপ নেয়। একমাত্র জিয়াউর রহমানই কিন্তু সেই একনায়ক তন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে গণতন্ত্র বা জনতন্ত্র ফিরিয়ে আনে, আমার নাম দেওয়া হয় বহু দলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা।
এবার আসেন, রাষ্ট্রনায় হিসেবে জাতীয়তাবাদী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান আলোচনা করি। জাতীয়তাবাদ মূলত কি? এই প্রশ্নটা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। জাতীয়তাবাদ বলতে মূলত বুঝায়, “যে মতবাদের উপর রাষ্ট্র গঠিত। রাষ্ট্রের জাতীয় মতবাদ বা জাতীয় মূল নীতি। হোক সেটা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা বা চিকিৎসা। অথবা রাষ্ট্রনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি সমাজনীতি ও অর্থনীতি। যাই হোক না কেন,সেই মতবাদকে বাস্তবায়নের নিমিত্তে যে দল বা সংঘ কাজ করে তাকে মূলত জাতীয়তাবাদী সংঘ বা জাতিতাবাদী পার্টি বলা হয়।
এবার চলুন আরেকটি বিষয় আলোচনা করি। জিয়াউর রহমানের মতবাদের প্রতিফলন কতটুকু ঘটাতে পেরেছেন? জিয়াউর রহমান একজন রাষ্ট্রনায়ক। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উনার রাষ্ট্রের দায়িত্ব কতটুকু!
একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করা, জনগণের মঙ্গল কামনা করা, জনগণের জীবন মানে উন্নয়ন ঘটানো, জনগণের মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি সেবা) নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
জিয়াউর রহমান কি করেছেন?
জিয়াউর রহমান সংবিধানকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মতবাদকে জিয়াউর রহমান সংবিধানে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংবিধানে মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা প্রতিস্থাপন করেছেন। জনগণের মৌলিক অধিকারের কথা জিয়াউর রহমান শুধু সংবিধানের অন্তর্ভুক্তই করেন নাই, উনি তা বাস্তবায়নে করে দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব কে ঘটিয়েছেন? নিঃসন্দেহে জিয়াউর রহমান। আমরা গর্ব করে বলি,”মাছে ভাতে বাঙালি”। ভাত কোথা থেকে কোথায় পাইলাম ভাই। আমরা তো এক বেলা খেতে পারতাম না! আমাদের না ছিল উন্নত কৃষি ব্যবস্থা, না ছিল উন্নত মানের কৃষি। আমাদেরকে আমন মৌসুমের বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে এক ফসল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে উন্নত মানের কৃষি উপহার দিয়ে কে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন?
জিয়াউর রহমান বিদেশ থেকে উন্নতমানের ধানের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে উন্নতমানের সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, তা বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে স্মরণ করে লেখা থাকবে।
স্বাধীন বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য জিয়াউর রহমান যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের অবদান রেখেছেন তা অনস্বীকার্য। বর্ষা মৌসুমে নিচু বন্যা কবলিত এলাকাগুলোকে রক্ষা করার জন্য যে বেরিবাঁধ তৈরি করা হয়, সে সব কর্ম ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণই রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করে।যা সেই সময়ের আলোক চিত্রীদের তোলা চিত্রকর্মগুলো দেখলে বোঝা যায়। একজন রাষ্ট্রনায়ক শুধু জনগণের মঙ্গলের চিন্তা নয়, তা বাস্তবায়নের জন্য তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ রাষ্ট্রের প্রতি কি পরিমাণ দায়বদ্ধতা স্বীকার করে তা বোঝার বিষয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য, জিয়াউর রহমান কতগুলো স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য জিয়াউর রহমান কতগুলো মসজিদ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে, তা এখনো হিসেবে অংক কষলে পাওয়া যায়।
মূলত জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে যেসব রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড জড়িত, সব ক্ষেত্রে “জিয়াউর রহমান” অবদান সব থেকে বেশি। জিয়াউর রহমান হল জাতীয়তাবাদের জনক। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রনেতা হিসেবে যা কিছু করেছেন, স্বাধীনতার পর আর কোন রাষ্ট্রনেতা করতে পারেন নাই।
জিয়াউর রহমানের রাজনীতি হল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণের দ্বারাই, জনগণের মঙ্গল। তাই জাতীয়তাবাদী মতবাদের সকল অনুসারী ভাইদের কে আহ্বান জানাই, শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদ মতবাদের উপর ভিত্তি করে আমরা গড়তে চাই আগামীর বাংলাদেশ এই শপথে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।