
সজীব ,রূপসা প্রতিনিধঃ
রূপসায় বতর্মান সময় অধিকাংশ মানুষ ফ্রিজে লোড দিয়ে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ায় অতীতে যেমন একসঙ্গে অনেক গোস্ত বড় হাড়িতে করে রান্না করে পরিবারের সকল সদস্য,পাড়া—প্রতিবেশি, আত্নীয়—স্বজন, ভিখারি সহ সকলে মিলে মিশে আনন্দের সাথে খাওয়া হতো। রান্না করা ঐ গোস্ত প্রতিদিন চুলায় জ্বাল দিয়ে ভাঁজা ভাঁজা করে সংরণের মাধ্যমে খাওয়া হতো। ফলে এই গোশের অতুলনীয় স্বাদ ও মনোমুগ্ধকর গন্ধে চারিপাশের আকাশ —বাতাস সুবাসিত হয়ে উঠতো। চুঁই ঝালের মিশ্রিত কালো বর্ণের এই গোস্তদিয়ে প্লেটের পর প্লেট ভাত খেয়ে সাবার করে দেওয়া যেত। যদি কখনও খেতে খেতে কলিজার এক টুকরো গালে যেত তা চাবান দিলে মনে হতো কি অমৃত সুধা খাচ্ছি। কোথায় যেন সেই স্বাদ আমারা আজ হারাতে বসেছি। বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশ আজ আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে।বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে আমরা নানা রকম যন্ত্র পাচ্ছি। যার ব্যবহারে আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে কিন্তু হারিয়ে ফেলছি অনেক অতীত আনন্দের স্মৃতি গুলোকে। কুরবানী বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু জবেহ করা। ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কুরআন, হাদীস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরবানিকারী কোরবানির গোশত নিজে খেতে পারেন, হাদিয়া দিতে পারেন এবং সদকা করতে পারেন। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: “অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ অভাবীকে আহার করাও”। ( সূরা হাজ্জ, আয়াত: ২৮) কোরবানির গোশত কতটুকু খাওয়া যাবে, কতটুকু হাদিয়া দেওয়া হবে এবং কতটুকু সদকা করা হবে এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে— এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ হাদিয়া দেওয়া এবং এক তৃতীয়াংশ সদকা করা। আজকাল সমাজের মধ্যে কুরবানী নিয়ে আলোচনা হলে তাতে প্রায়ই শুনা যায় যে, কে কার চেয়ে বেশি দামে কুরবানী দিয়েছে, কার গরুতে বেশি মাংস হয়েছে কিংবা আগামী কয় মাস মাংসের বাজার না করে পারা যাবে, এসকল আলোচনাই মূখ্য হয়ে ওঠে। কিছুকিছু মানুষ এই নিয়মের বাইরে গিয়ে ভাই—বোন, আত্নীয়—স্বজন,পাড়া—প্রতিবেশি ও গরীব—মিসকিনদের কোরবানিতে হক বঞ্চিত করে বেশি দিন ধরে নিজেরা খাওয়া জন্য ফ্রিজ বা হিমায়কে সংরণ করে রাখছে।আমাদের সমাজে এমনও বাড়ি আছে,যে বাড়ির ফ্রিজে এবছরের কোরবানির গোশ আগামী বছর কোরবানির সময়ও পাওয়া যাবে। এমনকি ফ্রিজে দির্ঘদিন রাখতে রাখতে দূর্গন্ধ বা নষ্ট হয়ে যায়। ১৯১৩ সালে ঘরে ব্যবহারের উপযোগী রেফ্রিজারেটর তৈরি করা হয়। ১৯২৩ সালে ফ্রিজিডেয়ার কোম্পানি প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ একক ফ্রিজ বানায়। ১৯২০ দশকে ফ্রেয়ন আবিষ্কারের পর ৩০—এর দশকে রেফ্রিজারেটরের বাজার প্রসারিত হয়। রেফ্রিজারেটর আসার পূর্বে জমানো বা হিমায়িত খাবার ছিল বিলাসদ্রব্য, কিন্তু এখন তা সাধারণের নাগালে চলে এলো। রেফ্রিজারেটরের কারণে আধুনিককালে আগের চেয়ে বেশি সময় খাদ্য টাটকাভাবে সংরণ করা যাচ্ছে। ফলে লোকজন এখন কোরবাণী দিয়ে গোশত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে দিচ্ছে। এ প্রসংঙ্গে এনএসকে মহিলা দাখিল মাদ্রার সুপার মোঃ খবীরুদ্দীন বলেন, আমাদের ছোট বেলায় বাড়িতে কোরবাণী দিয়ে যতটুকু আত্মীয় স্বজন ও ফকির মিসকীনদের দেওয়ার পর আমাদের ভাগের টুকু বড়ো পাতিলে করে রান্না করা হত। সেই গোশত পাড়া—প্রতিবেশী ও আত্মীয়—স্বজন মিলে কয়েকদিন ধরে খেতাম। ঐ গোশে আলাদা রকম স্বাদ পেতাম এবং মনোরম সুগন্ধ ছিলো। যা এখন কার দিনে আর দেখা যায় না। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~