ঠিকাদারের অবহেলায় সেতুর কাজ বন্ধ, দুর্ভোগে ৫ ইউনিয়নের মানুষ

0
15

ফিরোজ আহম্মেদ বাঁধন (বেরোবি প্রতিনিধি):

কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর নদীবন্দর সড়কে তিন বছর ধরে চলা ৯০ মিটার সেতুর নির্মাণকাজের অর্ধেকও শেষ হয়নি। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার প্রায় দুই কোটি টাকার বিল তুলে সটকে পড়েছেন। তাকে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণ এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। ঠিকাদার পলাতক থাকায় বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। ফলে দুই উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অ্যান্ড কে এম আবু বকর জেভির অংশীদার বদরুল হাসান মামুন দাবি করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ হলেও তারা কাজটি করেননি। গোলাম রব্বানী নামের স্থানীয় এক ঠিকাদার তাদের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি নিয়েছেন। পরে তারা জানতে পেরেছেন, ওই ব্যক্তি ঠিকমতো কাজ না করে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়ে সটকে পড়েছেন। বিলের টাকা তারা তোলেননি। অথরাইজ থাকায় বিল গোলাম রব্বানী তুলেছেন। মূলত লাইসেন্স ব্যবহার করতে দিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

জেলা সদরের সঙ্গে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ এবং সদর উপজেলার পাঁচগাছি, যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ- এই চার ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র পথ কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর নদীবন্দর সড়ক। শুধু তাই নয়, জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীবেষ্টিত যাত্রাপুর নদীবন্দর। এখানে সপ্তাহে দু’দিন শনি ও মঙ্গলবার গরু-ছাগল-ভেড়া-মহিষ, ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনার হাট বসে। এ হাটটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের সুলকুর বাজার এলাকায় অবস্থিত সড়ক সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ভেঙে ফেলা হয়। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দীর্ঘ নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বসুন্ধরা অ্যান্ড কে এম আবু বকর জেভি নামক প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়। কাজ শেষের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় তিন বছর। এ অবস্থায় পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলার সময় এর পাশে যেনতেনভাবে চলাচলের জন্য বিকল্প হিসেবে একটি মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়। শুস্ক মৌসুমে এই বিকল্প সড়কে হেঁটে চলাচল করা গেলেও যানবাহন চলে না। বর্ষায় ডুবে যায়। তখন নৌকায় পারাপার হতে হয়। নির্মাণাধীণ সেতুটির পূর্ব পাড়ে চার ইউনিয়ন আর পশ্চিম পাড়ে জেলা সদরের অবস্থান।

পূর্ব পাড়ের পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সেতুটির নির্মাণকাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিকল্প সড়কটি খুব সরু। শুস্ক মৌসুমে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও যানবাহন চলে না। বর্ষা মৌসুমে সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। তখন নৌকায় পারাপার করতে হয়। ফলে দুর্ভোগের পাশাপাশি মালপত্র পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে অসুস্থ মানুষ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা সদরে নিয়ে যেতে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বলেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় ঠিকাদার গাফিলতি করার সুযোগ পেয়েছেন। এখন কাজ বন্ধ করে সটকে পড়েছেন। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।

এই প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আগের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে।