মাদরাসার হল দখল করে ছাত্রলীগ নেতার মাদক কারবার: অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

0
7

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:

রাজধানী ঢাকার বকশিবাজারের সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া’র হল দখল করে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে নরসিংদী সদরের বেলাল নগরের মো. মাজহারুল হকের ছেলে আজিজুল হক (২৫) নিয়মিত মাদক কারবার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরের নির্যাতন, অত্যাচার করছে বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এবিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার করেও প্রতিকার পায়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলের ছাদ, বারান্দা ও কক্ষে আজিজুল হক বহিরাগতদের নিয়ে প্রতিদিন ইয়াবা, গাঁজা সেবনের আসর বসায়। মাদকের গন্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পরে। কাশগরি হলের ৩৭৫ নং কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আজিজুল হক।

চকবাজার থানার এফআইআর নং ৪, জিআর ৩৫১/২১ নং মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গেলে জামিনে মুক্ত হলেও চকবাজার থানার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নং ৫৩০/১৫ নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার মামলা নং জিআর ৪২৬/২০, থানার নং ৩৮ মামলার আসামী আজিজুল হক। একাধিক মামলার সাথে সাথে তার নামে মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও আসেনি কোনো প্রতিকার। এখনও মাদকসহ অন্যান্য অপকর্মের সাথে জড়িত আজিজুল।

ছাত্রবাসে বৈধভাবে অবস্থানকারী বেশ কিছু শিক্ষার্থী হল কর্তপক্ষ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসগুলো পরিদর্শন করে আজিজুল হক মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত বলে প্রমাণ পায়।

সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট শিক্ষক পরিষদের সভায় আল্লামা কাশগরি (রহ.) হলের ৩৭৫ নং কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থানরত আজিজুল হক ও তার সঙ্গী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অনুরোধ জানাবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামী ছাত্রলীগ নেতা আজিজুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। গোপন সূত্রে আরও জানা গেছে , আজিজুল হক আল্লামা কাশগরি হল ও শহীদ ইব্রাহীম হলে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও বিভিন্ন থানা ইউনিটের পদধারী নেতাদের হলের রুম দখল করে অবস্থান করিয়ে মাদক ব্যবসা করিয়ে থাকেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্র অধিকার পরিষদের আলিয়া মাদ্রাসা শাখার সহ সভাপতি মাহদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাওন মাহমুদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাহমুদ।

সম্প্রতি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের দেয়াল লিখনে আলিয়া মাদ্রাসার ক্যাম্পাস ও হলের দেয়ালগুলো ছেয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আজিুজুল হকের ঘনিষ্ঠজন মাহমুদুল ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নগর নেতা। আজিজুল সাহস যুগিয়েছে বলেই তারা এসব দেয়াল লিখন করতে সাহস দেখিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমি গরীব ঘরের ছেলে, খুব কষ্ট করে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলাম। হলে থাকতাম কিন্তু আজিজুল আমাকে দিয়ে বিভিন্ন সময় মাদক কারবারি করাতে চাইত। আমি রাজি না হলে আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছে। এখন যদি আমার নাম প্রকাশ করি তবে আমাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিবে না আজিুজল।

সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ বলেন, আপনারা দুই একের মধ্যে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। আমি এই মুহুর্তে কিছু বলতে রাজি নই।

মাদ্রাসা-ই আলিয়ার প্রাইভেট শিক্ষার্থী আজিজুল হক বিবাহিত হয়েও ছাত্রলীগের মতন ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ।

অভিযোগের বিষয়ে আজিজুল হক বলেন, চকবাজার থানার মামলাটি অনেক আগের। হলে মাদক কারবার। বাকি সকল তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। এসময় আজিজুল মাদক কারবার, বিবাহিত এসব তথ্য কে দিয়ে দিয়েছে বলে বারবার চার্জ করতে থাকেন।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কাইয়ুম বলেন, এটা অনেক পুরোনো মামলা, তাই নথি দেখে বলতে হবে। থানায় আসুন একসময়। সময় করে খুঁজে বের বিস্তারিত বলতে পারব।