নেত্রকোণায় মানসিক ভারসাম্যহীন শংকরীর ২০ বছর টয়লেটে জীবনযাপন

0
17

বিপুল জামান লিখন,নেত্রকোণা প্রতিনিধি:  বাস্তব চিত্রকেও হার মানাবে!মানুষের জীবন এত দূর্বীষহ হতে পারে।মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মানুষের বাসস্থান এত নিচু আর জীবনের টানাপোড়েনর বিষাদময় দুঃখের কথা কখনো কল্পনা করা যায় না।বলছি নেত্রকোণার শংকরী লাল গুহ(৪৫) এর কথা।প্রায় (২০) বছর যাবৎ টয়লেটে জীবন যাপন করছে।নড়াচড়া করার কোনো ফায়দা নেই,নেই কোনো দখিনা বাতাস বা ঝড়ের তান্ডব থেকে বাঁচার আকুতি।এক ফালি ভাঙা টিনের বেড়ার টয়লেট।স্বাস্থ্যের কথা তো ভাবাই যায় না।কারাবাস হলেও এত দূর্বিষহ হয় না কারু জীবন।

 

মানসিক ভারসাম্যহীন শংকরী লালের চিকিৎসা হওয়া কথা নেই।পরিত্যক্ত টয়লেটে কাঠের তক্তা দিয়ে শুয়ার মাদুর,দুর্গন্ধ আর মাছির ভনভনানি হয় তার রাত খাটানোর নিত্য সাথী।এভাবেই চলছে যুদ্ধের জীবন।কারাগারের মতো জীবনের বেশি সময় খাঁটিয়ে দিয়েছেন।পায়ে লোহার শিকল কখনো বা শক্ত দরি দিয়ে আটকানো।শক্ত বাঁধনে পায়ের গোড়ালিতে ছোপ পড়ে গেছে।বিষয়টি চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।পরিস্কার পরিচন্নতা স্বাস্থ সুরক্ষা কিছুই নেই।

 

উল্লেখ্য যে,শংকরী লাল নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌর শহরের আমলাপাড়া মৃত শম্ভুলাল গুহের তৃতীয় সন্তান।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,শংকরী লাল মেধাবী ছাত্রী ছিল।তিনি বিরিশিরি মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন।কিন্তু ছোটকালেই পিতা মারা যাওয়ায় পরিবারের অভাব অনটনের কারণে স্কুলের গন্ডিতে পা পড়িনি।একসময় পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের কাজে মনোযোগ দেন।

 

২০০১ সালে হঠাৎ নাকের সমস্যা দেখা দেয় কিছুদিনের মধ্যেই তা টিউমারে রুপ নেয়।এর চিকিৎসা করে ভালো করলেও এরপর থেকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তার আচরণ।
একপর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে শংকরী।তখন থেকেই শুরু বন্দিজীবন।

 

মায়ের জীবদশায় তার দেখাশুনা করলেও মা মারা যাওয়ার পরে আরোও কঠিন হয়ে পড়ে তার স্বাভাবিক জীবন।এমন পরিস্থিতিতে ছোট ভাইয়ের পক্ষে তার দায় দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব না।ছোট ভাইয়ের পরিবারের পাঁচ সদস্য রয়েছে।তাই তার হিমশিম খেতে হয়।

 

স্থানীয় একটি বেসরকারি প্যাথলজিতে পিয়নের চাকরি করে সংসার চললেও বোনের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে পারেন না তিনি।ঘর না থাকায় শংকরীর জায়গা টয়লেটে হলো।

 

শংকরীর স্কুলের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, শংকরী অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বেশিরভাগ সময় তিনি মামারবাড়ি শিবগঞ্জ থেকেই বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করতো।

 

শংকরী ভাই জীবন লাল গুহ বলেন, হঠাৎ করেই আমার বোন অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমরা চিকিৎসা করিয়েছি। অনেক কষ্ট লাগে, কিন্তু কী করবো! আমার সামর্থ্য নেই। সামান্য একটা চাকরি করে কোনো রকমে সংসার চলে। নিজের ঘর ভেঙে পড়ছে। এখন তার জন্য একটা ঘর করে দেবো তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। টাকার সঙ্কটে চিকিৎসা করতে পারতেছিনা।

সামাজিক মাধ্যমের সফলতা মাধ্যমে বিষয়টি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আমলে নেয় এবং শংকরীর চিকিৎসা ও ঘরেরে ব্যাবস্থা করেন।পাশাপাশি,সামাজিক মাধ্যম থেকে বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

 

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব উল আহসান বলেন, খবর পেয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছি,চিকিৎসার ব্যাবস্থা ও ঘরের জন্য টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।