
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বুনো হাতির তাণ্ডব বেড়েই চলেছে। গত কয়েক মাস থেকে ভারতের গারো হীল ও নিকটবর্তী পাহাড় থেকে বুনো হাতির দল সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে।
রাতভর হাতির দল সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে ফসলের পাশাপাশি ঘর-বাড়ির ক্ষতি সাধন করে ভোরের দিকে আবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রাত পার করছে সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা। রাতভর আগুন জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর কাজ করছে গ্রামবাসীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রৌমারী থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারব্যাপী কাঁটাতার রয়েছে। এর মধ্যে আর্ন্তজাতিক মেইন পিলার ১০৬৭ থেকে ১০৭৪ সীমান্ত দিয়ে বুনো হাতিগুলো বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে। কিন্তু পিলার ১০৭১ এর ২৩এস ও ১০৭৪ পিলার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার কাঁটাতার না থাকায় ক্ষুধার্ত হাতিগুলো সহজেই সমতল ভূমিতে নেমে আসে।
এলাকাবাসী জানায়, গত ২ মাস ধরে এই বুনো হাতির তাণ্ডব চলছে। এতে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক কৃষকের রোপণ করা ১০০ একর বোরো ক্ষেত, ১৫ একর গম, ২ একর কলাবাগান, ১০ একর ভুট্টা ক্ষেত, ১৫ একর আখসহ প্রায় ১৫০ একর ফসলী জমি নষ্ট হয়েছে।
বুনো হাতির দল অর্ধ শতাধিক ঘর ভাংচুর, ২৫টি স্যালো মেশিন, ৫টি নলকূপ ভাংচুর করেছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসীরা। এছাড়াও রৌমারী উপজেলার চর বড়াইবাড়ি গ্রামের হযরত আলী, সিরাজুল, রফিক, শাহাজামাল, শাখাওয়াত হোসেন ও ফাতেমা বেগমের বাড়িসহ বেশ কিছু ঘর-বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ঘরে রক্ষিত খাবারের জিনিস ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে বুনো হাতির দল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএসএফ সদস্যরা কাঁটাতারের গেট খুলে লাইট জ্বালিয়ে বুনো হাতির দলকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়ায় হাতির দল সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে।
রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, ভারতের মাইনকারচর থানার কালাইরচর সীমান্ত দিয়ে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, রৌমারী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে রাতের বেলা বুনো হাতির দল নেমে আসে। কয়েক দিন পর পরই এঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের নিকট আমাদের আবেদন তারা যেন এর একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য রুহুল আমিন জানান, ভারতীয় হাতি দলবেধে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। বিষয়টি তিনি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন এবং দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।
৩৫-বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, উত্তেজিত হাতির দলকে ঠেকাতে না পেরে এ ঘটনা ঘটছে। বিএসএফ সদস্যরা তাদের সীমান্তে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে দেয়ায় হাতিগুলো ফিরে যেতে পারে না। এতে আমাদের লোকজন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, হাতির নিজস্ব চলাচলকে কেউ আটকাতে পারে না। এ ব্যাপারে উভয় দেশের পরিবেশবিদদের আলোচনা করা দরকার, যাতে করে ক্ষতি কমানো যায়।