
মোঃ শরিফুল ইসলাম (সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি): একদিকে বন বিভাগের কঠোর নিরাপত্তা ও অন্যদিকে বাঘ আর কুমিরের ভয়বহতা এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ২টি কূপ থেকে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে গোলপাতা আহরণকারী বাওয়ালীরা।
মৌসুমের দ্বিতীয় ট্রিপে নির্বিঘেœ গোলপাতা আহরণে রীতিমত ব্যস্ত সময় পার করে নৌকা নিয়ে সবাই ঘরমুখি। তবে আগের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় গোলপাতা কাটার ব্যাপারে খানিকটা হলেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন সংশ্লিষ্ট বাওয়ালীরা। জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে একটা সময় গোলপাতার ঘরের বহুল প্রচলন ছিল, তবে সময় বদলেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অধিকাংশ এলাকায় ঘরের ছাউনিতে এখন আর আগের মত গোলপাতার ব্যবহার হয়না। তাই চাহিদাও কমেছে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে।
দূর্যোগ প্রবন উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে বাঁচতে গোলপাতার ব্যবহার ছেড়ে তারা এখন ঝুঁকছেন টিনের দিকে।শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর গ্রামের বাওয়ালী বদরুল ইসলাম বদর বলেন, সুন্দরবন থেকে বনজ দ্রব্য আহরণে কড়াকড়ি ও চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় মূলত গোলপাতা আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছেন বাওয়ালীরা।
গত কয়েক বছরের ন্যায় চলতি আহরণ মৌসুমেও গোলপাতা আহরণে বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল বন বিভাগ। ফলে বাওয়ালীদের পাশাপাশি এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবিরা কিছুটা দেরিতে পারমিট সংগ্রহ করে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের কূপ (জোন) থেকে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
শ্যামনগর উপজেলার পারশ্বেমারী গ্রামের বাওয়ালী ফিরোজ হোসেন বলেন, বন বিভাগের স্টাফদের আচার আচারনে এখন বাওয়ালীরা বেশ খুশি। গত ১৬ মার্চ সাতক্ষীরা কুপে গোলপাতা কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমনে প্রান হারায় বাওয়ালী আবুল কালাম আজাদ। সংবাদ পেয়ে বন বিভাগের কুপের স্টাফরা জীবন বাজী রেখে কাছিকাটা এলাকার পায়রা টনি খাল হতে তাকে বাঘের কোবল থেকে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
খুলনা রেঞ্জের কুপ কর্মকর্তা কাজী মাহফুজুল হক বলেন, নিবিঘেœ গোলপাতা কাটতে বন বিভাগের পক্ষে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। কোন প্রকার অনিয়ম যেন না করতে পারে সেদিকে সার্বক্ষনিক তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অভিযোগ ছাড়াই গোলপাতা আহরন করতে পেরে বাওয়ালীরা বেজায় খুশি। সহযোগী কুপ কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে প্রথম দফায় ১৪৫টি বিএলসির অনুকুলে ৭০ হাজার ১শ ২৮ মন ও দ্বিতীয় দফায় ৯২টি বিএলসির অনুকুলে ৪৫ হাজার ৬শ ৩৯ মন। অন্যদিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহযোগী সুলতান আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার ১টি কূপে গোলপাতা সংগ্রহ করতে ৩৭টি বিএলসির অনুকুলে বাওয়ালীরা প্রথম দফায় ১৭ হাজার ৬ শ ৩৫ মণ গোলপাতা সংগ্রহের অনুমতি (পারমিট) গ্রহন করে।
দ্বিতীয় দফায় একই বিএলসির অনুকুলে ১৭ হাজার ৬শ ৩৫ মন পারমিট গ্রহন করেন বাওয়ালী। এখন গোলপাতা কাটার কাজ শেষ। হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে সকলেই। সাতক্ষীরা গোলপাতা কুপ কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এ সকল বিএলসির অনুকুলে এসব পারমিট দেওয়া শুরু হয় এছাড়া আহরনের কাজ শেষ হয়েছে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ সালেহ বলেন, বাওয়ালীরা যাতে নিবিঘেœ গোলপাতা কাটতে পারে সেজন্য কূপের পক্ষে নিয়মিত তদারকি করা হয়েছে।
এ বছর প্রতিটি স্টেশন ও কূপে নিয়মিত তদারকিপূর্বক বিএলসি নবায়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আহরণের সময় যাতে গোলপাতা ঝাঁড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনো ভাবেই কর্তন না করে এবং কূপে নৌকার সাথে মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান