মৌমিতা ইসলাম মিম (বেরোবি প্রতিনিধি):
বছর পেরিয়ে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন এ মাসে যথাসম্ভব ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই প্রত্যেকের কাম্য। বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য চাই সুস্থ দেহ আর সুস্থ দেহ পাবার অন্যতম শর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহন।
অনেকে অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে সাহ্রি না খেয়েই রোজা পালন করেন; এটা উচিত নয়। কারণ, এতে একদিকে যেমন সাহ্রি সুন্নতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়, অপরদিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং কর্তব্য কর্ম আমল ও ইবাদত সম্পাদনে অন্তরায় হতে পারে। অনুরূপ কেউ কেউ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেও অলসতা করেন। এতেও ইফতারের সুন্নতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটা ও অসুস্থতার কারণ ঘটতে পারে।
সাহ্রিতে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে রোজা পালন সহজ হয় এবং ইবাদতের অসুবিধা না ঘটে। ইফতারেও এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে স্বাস্থ্য রক্ষা হয় এবং রাতে তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সহায়ক হয়। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করে রাতে বারবার অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
ইফতারের সময় ভাজাপোড়া, গুরুপাক খাদ্য, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণে আমরা অতি-অভ্যস্ত। এটা মুখরোচক তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ওই সময় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেহ ক্লান্ত থাকে। তখন দ্রুত ক্যালরি পৌঁছে দেয়ার জন্য তরল পানীয় শরবত। (তবে বাজারে প্রচলিত রঙিন শরবত এবং তরল কার্বনেটেড ড্রিংকস বর্জনীয়) এ জন্য লেবুর শরবত উত্তম। লঘুপাচ্য খাবার এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ ফলমূল গ্রহণ উপযোগী। কিন্তু আমরা তা করছি না। এতে রমজানের উপকারিতা থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ওইসব ক্ষতিকর গুরুপাক খাবার গ্রহণের ফলে অনেকেই রমজান মাসে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন। এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ইসবগুলের ভুষির শরবত, পাকা বেলের শরবত, পাকা পেঁপে এবং শাক-সবজি বেশি করে খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, রমজান মাসের দিবা উপবাস রাতে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের দ্বারা পূরণ করা সঙ্গত নয়। কারণ রাত্রিকালীন যথাযথ দেহ সঞ্চালনের অভাবে হজম ক্রিয়া হ্রাস পায়। এ জন্যই রাতে গুরুপাক খাবার বর্জনীয়। রমজান আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় পানাহারে সংযমী হতে নিয়ম শিক্ষা দেয়। লক্ষণীয় যে, রমজান মাসে কেবল উদরপূর্তি আর অনিয়ম দিয়ে যেন পাকস্থলীর গোলযোগ সৃষ্টি করা না হয়। কারণ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে : পাকস্থলী সমস্ত রোগের সূতিকাগার।
রমজানের রোজা যেমন ফরজ করা হয়েছে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল করা হয়েছে। এমনভাবে রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। রোজায় সুষম খাবার পরিমাণমতো গ্রহণ করলেই শরীর সুস্থ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।