চিকিৎসক ছেলেকে হারিয়ে মায়ের কান্না

0
15

গাজীপুর সদর প্রতিনিধি;

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান অমিত। জন্মের পরই তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন ব্যবসায়ী নন্দ দুলাল ও নীলা রানী দম্পতি। এক যুগ আগে হঠাৎ সেই স্বপ্নে বাধা তৈরি হয় বাবা দুলালের মৃত্যুতে।

ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ছিল বাবার। সেই স্বপ্ন পূরণে সংগ্রাম শুরু করেন মা নীলা। এক সময় এসে মা ও প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণ হয় মেধাবী ছেলে অমিত চিকিৎসক হওয়ার মধ্যদিয়ে। এরপর মা এঁকেছিলেন সুখের একটি সংসারের মানচিত্র। ছেলেকে বিয়ে করাবেন, ঘর আলোকিত করে আসবেন নতুন অতিথিরা, তাদের সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতে থাকবেন সব সময়। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী নৌ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। পরে ভালুকা ও শ্রীপুরের ক্ষিরু নদীর মোহনায় নৌকাটি বালি ভর্তি একটি ব্ল্যাঙ্ক হেডেডের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে পানিতে ডুবে এই চিকিৎসক নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে আজ বুধবার দুপুরে স্থানীয় জেলেদের জালে আটকে থাকা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন। নিহতের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে সন্ধ্যায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মা নীলা গাজীপুর শহরের বিলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা। একটি দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে কান্নার পানিতে অন্ধকার নেমে এসেছে তার দুচোখজুড়েই। বাকি জীবনটা স্বজনবিহীন হয়ে বুকে পাথরচাপা দিয়ে বেঁচে থাকাও যেন নিশ্চয়তা আর পাচ্ছেন না এই মা।

নিহত অমিতের চাচা সুনীল সাহা বলেন, ‘তার ভাই মারা যাওয়ার পর তার ভাবি একমাত্র ভাতিজা অমিতকে নিয়েই স্বপ্ন বুনেছিলেন। তাদের পরিবারে মা ও ছেলেরই ছিল সংসার। তবে সৃষ্টিকর্তা এক এক করে এই পরিবারের সবাইকে নিয়ে গেলেও তার ভাবি রয়েছেন। বাবার অবর্তমানে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে চিকিৎসক বানিয়েছিলেন মা। সংসারে সবেমাত্র সুখের পাখা মেলেছিল। এর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে, একটি দুর্ঘটনায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই খুব মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ছিল অমিত। গাজীপুর শহরের সরকারি রানী বিলাশ মনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সিলেট সরকারি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।’

গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জিত মল্লিক বাবু বলেন, ‘অমিত আমার চোখের সামনেই বেড়ে উঠেছে। মেধাবী এই ছেলেটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। সে সিলেট মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সেখানকার কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। চিকিৎসক হওয়ার পর সে গাজীপুর মহানগর সেস্বেচ্ছাসেবক লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিল। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে সে গাজীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে চিকিৎসকদের নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যের চিকিৎসার মাধ্যমে করোনাকালীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অগ্রনায়ক সে। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মীকে হারালাম যা পূরণ হবার নয়।’

ভালুকা উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা ডা. মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘৩৯তম বিসিএসে নিয়োগ লাভ করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন অমিত। করোনাকালীন সে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’