
৬৪ বছরের অধিক সময় পূর্বে নির্মিত কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারটি অযত্ন আর অবহেলায় আজ ক্রমবিলুপ্তির পথে প্রায়। নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘদিন এই শহীদ মিনারটিকে ঘিরে জেলার সব ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এখন কেউই সেখানে যায় না। ফলে স্মৃতির অতল গহ্বরে বিলীন হতে চলছে প্রথম এ শহীদ মিনারসহ ভাষা আন্দোলনের সৃষ্টি লগ্নের প্রকৃত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য।
জেলা শহরের মোল্লা পাড়ায় কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত মজিদা আদর্শ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের প্রবেশ মুখের বা দিকে তৎকালীন অসম সাহসী প্রগতিশীল কয়েকজন স্কুল ছাত্র কাদামাটি দিয়ে ইট গেঁথে নির্মাণ করে প্রথম এই শহীদ মিনারটি। ছাত্রদের ভালোবাসার শ্রমে তৈরি শহীদ মিনারটি আড়াই যুগ আগেও ছিল শহীদ দিবস পালনসহ অন্যান্য সব আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।
অথচ এখন তা পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। এর গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকান পাটের যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থে দুষিত হয়ে উঠেছে শহীদ মিনারের পরিবেশ। এমনকি রাতের আধারে প্রতিদিনই মাদক সেবীদের আড্ডা বসে সেখানে। যে কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঐতিহ্যবাহী ভাষা স্মারকটি অবস্থান করছে সেই কলেজ শিক্ষার্থীরাও জানে না এর প্রকৃত ইতিহাস।
১৯৫২ সালে কুড়িগ্রামে কোনো কলেজ ছিল না। এ কারণে এখানকার বিপ্লবী স্কুল ছাত্ররাই ঢাকার নৃশংস ঘটনার প্রথম প্রতিবাদ জানায়।
কুড়িগ্রামের ভাষা সৈনিকদের অন্যতম এ কে এম সামিউল হক নান্টু জানান, ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র নিহত হওয়ার খবর কানে এলে, তিনি সহ ডা. নুর, মোস্তফা বিন খন্দকার, ডা. আসাদ এবং আরো কয়েকজন স্কুল ছাত্রের নেতৃত্বে পর দিন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল ও মাইনর স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহরে একটি মিছিল বের হয়। পরে ১ নম্বর মাঠের স্কুলকে ভেন্যু করে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার ডাক দিলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসের আগে অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ, সাংবাদিক তোফায়েল হোসেন, সামিউল হক নান্টু, আব্দুল আহাদ, আব্দুল হামিদ, অ্যাডভোকেট আসাদসহ অন্যান্য ভাষা সংগ্রামী ছাত্ররা গড়ে তোলে জেলার প্রথম এ শহীদ মিনার।
১৯৮৬ সালে শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌর কর্তৃপক্ষ নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করলে ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী প্রথম এ শহীদ মিনারটি তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মণ্ডল।
এ দিকে কলেজের একই চত্বরে আরো একটি শহীদ মিনার নির্মাণের কথা স্বীকার করে প্রথম শহীদ মিনারটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল জলিল আশ্বাস দিয়ে বলেন, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি সংরক্ষণে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, কাদামাটি দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারটি ১৯৫৬ সালে ইট সিমেন্ট দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী এই স্মৃতিকে মুছে ফেলতে এটিকে গুড়িয়ে দিলেও দেশ স্বাধীনতার পর আবারো তা পুনর্নির্মিত করা হয়।